আমার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল সাজেক ভ্যালি ঘুরতে যাওয়া। প্রকৃতির কাছে নিজেকে হারিয়ে ফেলার জন্য এ জায়গাটি ছিল আমার কল্পনার ঠিকানা। অবশেষে সেই সুযোগ এলো।
যাত্রার সূচনা: মেট্রো ট্রেনে রাতের সফর:
ব্যাগ গুছিয়ে, মনের মধ্যে নানা রকম উত্তেজনা নিয়ে ঢাকা থেকে মেট্রো ট্রেনে উঠে যাই মতিঝিলের উদ্দেশ্যে। মেট্রো ট্রেনের আরামদায়ক সফর শেষ করে আমি সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাই।তখন রাত প্রায় দশটা বাজে ছিল। মেট্রো ট্রেনের যাত্রাটা ছিল আরামদায়ক এবং দ্রুত, কিন্তু যেহেতু সাজেকের জন্য প্রথমবার যাত্রা করতে যাচ্ছিলাম, মনে এক ধরনের উত্তেজনা ছিল। মতিঝিল পৌঁছানোর পর, সেখান থেকে আমি সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছানোর জন্য হাঁটা শুরু করি।
বাসের জন্য প্রস্তুতি
সায়দাবাদে পৌঁছানোর পর, বাসও উপস্থিত ছিল। ব্যাগ রেখে সিটে বসে যাত্রা শুরু করি সাজেকের উদ্দেশ্যে। ১১টার দিকে বাস ছেড়ে দেয়, এবং রাত ১টার মধ্যে কুমিল্লায় পৌঁছাতে পারি। সেখানেই আমাদের বিরতি ছিল। কিছু খেয়ে আবার বাসে উঠে রওনা দিয়েছি। পরবর্তী গন্তব্য ছিল খাগড়াছড়ি।
খাগড়াছড়ি: সাজেকের পথে প্রথম ধাপ
খাগড়াছড়ি পৌঁছানোর পর, শীতের সকালে আমরা সকালের নাস্তা করি, আর সেই সময়ের ঠাণ্ডা বাতাস আমাদের মনকে আরও সতেজ করে তোলে। আমরা যখন নাস্তা শেষ করি, তখন চাইছিলাম দ্রুত চান্দের গাড়ি এসে আসুক, কিন্তু সময়টা খুব একটা দ্রুত কাটছিল না। আমরা সবাই চান্দের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।
সকালে গাড়ি আসলেও কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর, ৯ঃ৩০ টার দিকে চান্দের গাড়ি চলে আসে। তবে গাড়ি ছাড়তে ছাড়তে প্রায় দশটা বেজে যায়, যা আমাদের খানিকটা বিরক্তি দেয়। কিন্তু, এই অনুভূতি খুব দ্রুতই বদলে যায় যখন আমরা জানি যে আমাদের সামনে একটি নতুন অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে। গাড়ি চলতে শুরু করলে পথটা আরও মনোরম হয়ে ওঠে, এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য আমাদের মনকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়।
কিছুদূর যাওয়ার পর, আমাদের গাড়ি আর্মি চেকপোস্টে থামে। সেখানে চেকিং করতে কিছুটা সময় লাগল, যার কারণে পুরো যাত্রা প্রায় তিন ঘণ্টা বেড়ে যায়। কিন্তু সেগুলো সত্ত্বেও আমাদের মনোযোগ নষ্ট হয়নি। উল্টো, সেই চেকিংয়ের সময়ের মধ্যেও আমাদের মধ্যে হাসিঠাট্টা চলে, এবং সময়টা একেবারে কাটেনি।
পরিশেষে, তিন ঘণ্টা পর আমরা সাজেক পৌঁছাতে সক্ষম হই, তবে সেই দীর্ঘ যাত্রায় কিছুটা ক্লান্তি থাকলেও সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আমাদের সমস্ত ক্লান্তি এক মুহূর্তে ভুলে গিয়েছিলাম।
সাজেকে পৌঁছে রুমমেটদের সঙ্গে প্রথম অভিজ্ঞতা
দীর্ঘ যাত্রার পর দুপুর ২টার দিকে আমরা অবশেষে সাজেক ভ্যালিতে পৌঁছাই। সাজেকের নির্মল বাতাস আর পাহাড়ি সৌন্দর্য তখন থেকেই আমাদের মুগ্ধ করতে শুরু করে। আমাদের রুমটি ছিল সাদামাটা তবে আরামদায়ক। দুইটি বেড, একটি অ্যাটাচড বাথরুম, আর পাশেই ছিল একটি বারান্দা। রুমটি এতটাই কাছাকাছি ছিল যে বারান্দায় দাঁড়ালেই পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখা যেত।
রুমমেটদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তখন থেকেই জমাট বাঁধতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরিচিতি পর্ব আর হাসি-তামাশার পর আমরা সবাই মিলে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিই। এরপর দুপুরের খাবার পরিবেশিত হয়।
মেনুতে ছিল ভাজি, বাঁশে রান্না করা বিশেষ চিকেন, আলুর ভর্তা, ডাল, আর ভাত। খাবারের স্বাদ ছিল ভালো, তবে পরিমাণে কিছুটা কম। তবে বাজেট ট্রিপ হওয়ায় এ নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ ছিল না। খাবার শেষ করে আমরা কিছুটা বিশ্রাম নিই, কারণ সামনের পরিকল্পনা ছিল আরও রোমাঞ্চকর।
কংলাক পাহাড়ে চড়ার চ্যালেঞ্জ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুগ্ধতা
বিকেলে আমরা কংলাক পাহাড় দেখতে বের হই। পাহাড়ের পথ ধরতে চান্দের গাড়িতে চড়ে যাত্রা শুরু হয়। আমি গাড়ির ছাদে বসেছিলাম। যদিও ভয়ানক রাশ ড্রাইভিংয়ের কারণে এই যাত্রা আমার জন্য রোমাঞ্চকর হলেও ভয়ও কিছু কম ছিল না।
কংলাক পাহাড়ে পৌঁছে পায়ে হেঁটে চূড়ায় ওঠার পালা। এটি ছিল আমার জীবনে প্রথম পাহাড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা, এবং তা ছিল চরম চ্যালেঞ্জিং। পাহাড়টি পুরোপুরি পাথুরে, আর চূড়াটি সমতল থেকে প্রায় ৪০০ ফুট উপরে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্তি আর শ্বাসকষ্ট শুরু হলেও আমি থামিনি। ধীরে ধীরে যখন চূড়ায় পৌঁছালাম, তখন সব ক্লান্তি যেন উধাও হয়ে গেল।
চূড়া থেকে দেখা সূর্যাস্তের সৌন্দর্য এতটাই মোহনীয় ছিল যে সেই মুহূর্তগুলো শব্দে বর্ণনা করা কঠিন। পাহাড়ের ওপরে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা আর রঙিন আকাশ আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছিল। সেদিনের সেই সৌন্দর্য আমাকে শিখিয়েছে যে কষ্টের পর অর্জিত অভিজ্ঞতা সবসময় বেশি মধুর।
সন্ধ্যা নামার আগেই আমরা পাহাড় থেকে নেমে আসি। কিন্তু কংলাক পাহাড়ের সেই সৌন্দর্য এবং অভিজ্ঞতা আমার হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে রইল।
নিস্তব্ধতার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়া”
রাতের শান্তি ও নিস্তব্ধতার মধ্যে হেলিপ্যাডে দাঁড়িয়ে, চারপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করে। সমস্ত পৃথিবী যেন আমাদের চারপাশে থেমে গিয়েছিল, আর আমরা একে অপরের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম। ভাঁট সিঁড়ি বেয়ে যখন আমরা হেলিপ্যাডে পৌঁছাই, তখন গা অন্ধকারে অল্প কিছু আলোর ঝলকানি ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না।
প্রাকৃতিক নিস্তব্ধতার মাঝে, আমাদের মনও যেন হালকা হয়ে যায়। কিছু সময়ের জন্য, সময় ও পৃথিবী অন্য এক গতি গ্রহণ করে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে মনে হতে থাকে, যেন আমরা স্রষ্টার এক খোলামেলা রচনা। কপালে ঠান্ডা বাতাস এসে অনুভূতির মাঝে এক নতুন দিগন্ত যোগ করে। চারপাশে জ্বলন্ত বাতির উজ্জ্বলতা আমাদের যেন নতুন করে চিনতে শেখায়।
এ সময়টা আমাদের সবার জন্য এক অন্য জগতে চলে যাওয়ার সুযোগ ছিল, যেখানে শুধুমাত্র নিজেকে অনুভব করা, পৃথিবীর এত কিছু থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়া, ছিল এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা। রাতে হেলিপ্যাডে সময় কাটানোর সেই বিশেষ মুহূর্তে, আমি যেমন প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম, তেমনি নিজেকেও নতুনভাবে আবিষ্কার করতে শুরু করেছিলাম।
রুইলুই পাড়ায় রাতের খাবার
রাত সাড়ে সাতটার দিকে আমরা রুইলুই পাড়ায় যাই। রাস্তার দু’পাশে কিছু স্টেট ফুড স্টল ছিল, যেখানে তারা খাবার পরিবেশন করছিল। তবে, খাবারের মান তেমন নতুন কিছু ছিল না। গরম খাবারের মানও ভালো ছিল না। সেখানে আমরা ভাবা পিঠা এবং চা খাই। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর, আমরা রুমে ফিরে যাই।
রাতের আড্ডা
রাতে, ডিনার ছিল বারবিকিউ চিকেন এবং পরোটা। খাবারের পর, আমরা সবাই একসাথে চা খেয়ে বেশ কিছু সময় আড্ডা দিই। খুশি মেজাজে, আমাদের দিনের শেষাংশটা কাটে হাসি-আড্ডায়। রাত ১২টার দিকে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়ি, যদিও মনে হয়েছিল, এই দারুণ অভিজ্ঞতার জন্য আরও কিছু সময় থাকতে পারতাম।
ভোরে সাজেকের নতুন রূপ
দ্বিতীয় দিন সকালে আমরা ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত প্রস্তুতি নেই। সাজেকের সেই ভোর যেন এক অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। সকালে ঠান্ডা তেমন ছিল না, তবে হালকা শীতল বাতাস অনুভূত হচ্ছিল। আশেপাশের প্রকৃতির ভিন্ন রূপ আমাদের অবাক করে দেয়। চারদিকে নির্জনতা, আর পাহাড়ের উপর আলো-ছায়ার খেলা যেন সাজেককে আরও বেশি মায়াময় করে তুলেছিল।
আমরা রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে ছবি তুলি। প্রকৃতির নিস্তব্ধতায় ভরা সাজেক তখন এক নিখুঁত চিত্রপটের মতো। সেই সময়ে পুরো জায়গাটি অন্যরকম শান্তি এনে দেয়।
দ্বিতীয় পাঠ: হেলিপ্যাডে সূর্যোদয়ের মুগ্ধতা
কিছুক্ষণ পরে আমরা হেলিপ্যাডের দিকে রওনা দিই সূর্যোদয় দেখার জন্য। হেলিপ্যাডে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে। এরপর, দিগন্তের আকাশে সূর্যের প্রথম কিরণ দেখা দেয়। সেই মুহূর্তটা ছিল অবর্ণনীয়।
প্রথমে সূর্যের উঁকি দিতে কিছুটা সময় লেগেছিল, কিন্তু একবার ওঠা শুরু করার পর তা দ্রুতই উপরে উঠে যায়। আলোর কিরণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, আর পাহাড়গুলো সোনালী আভায় মুড়ে যায়। সেই দৃশ্য দেখার জন্য যে ভিড় জমেছিল, তাদের আনন্দধ্বনি পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর আমরা হেলিপ্যাডের সৌন্দর্য উপভোগ করি। সাজেকের ভোরবেলার প্রকৃতি এবং সূর্যোদয় আমাদের সবার মন ছুঁয়ে যায়। এরকম একটি সুন্দর সূচনা দিয়ে দিন শুরু করাটা ছিল সত্যিই স্বপ্নের মতো।
সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি: দীর্ঘ কিন্তু মুগ্ধকর যাত্রা
সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি আসতে সময় লেগেছিল প্রায় চার ঘণ্টা। সকাল ১১টার দিকে আমরা ‘চান্দের গাড়ি’তে উঠি এবং পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে যাত্রা শুরু করি। যাত্রাপথটি যেমন দীর্ঘ ছিল, তেমনি ছিল মনোমুগ্ধকর। পাহাড়ি রাস্তার দুই পাশে বিস্তীর্ণ সবুজ, মাঝে মাঝে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া ঝর্ণার ধারা, আর উপরের নীল আকাশ যেন পথকে আরও সৌন্দর্যময় করে তুলেছিল।
এই চার ঘণ্টার পথে চালক অত্যন্ত সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, কারণ রাস্তা অনেকটা সংকীর্ণ এবং উঁচু-নিচু। যাত্রাপথে বেশ কয়েকটি জায়গায় থেমে বিশ্রাম নেওয়া হয়, যেখানে আমরা পাহাড়ের মৃদু বাতাসে নিজেদের ক্লান্তি কিছুটা দূর করতে পারি।
খাগড়াছড়িতে পৌঁছানো ও দুপুরের খাবার
বেলা প্রায় ৩টার দিকে আমরা খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছাই। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি নিয়ে আমরা সরাসরি একটি হোটেলে যাই। খাবারের টেবিলে ছিল গরম ভাত, ডাল, আলু ভর্তা, ভাজি, আর গরুর মাংস। এই ঘরোয়া খাবার যেন পুরো যাত্রার ক্লান্তি নিমেষেই ভুলিয়ে দিল।
বিশেষ করে গরুর মাংসের মসলাদার স্বাদ এবং আলু ভর্তার চিরচেনা গন্ধ আমাদের মন ভরে দেয়। ভাজি এবং ডাল ছিল একেবারে সতেজ এবং সহজপাচ্য, যা খাবারটিকে আরও উপভোগ্য করে তোলে।
খাবারের পর আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে খাগড়াছড়ির অন্যান্য সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রস্তুত হই।
সন্ধ্যায় আলুটিলা গুহার ভ্রমণ
দুপুরের খাবার ও বিশ্রামের পর বিকেল ৫টার দিকে আমরা আলুটিলা গুহার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। আলুটিলা খাগড়াছড়ির অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। সেখানে পৌঁছে প্রথমেই দেখা মেলে ঝুলন্ত সেতুর, যা গুহার প্রবেশপথের কাছে অবস্থিত। ঝুলন্ত সেতু থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহরের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। সোনালি আলোয় মোড়ানো পাহাড়ি পরিবেশ যেন এক অন্যরকম আবহ তৈরি করেছিল।
গুহায় প্রবেশের ইচ্ছা থাকলেও কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা ভেতরে ঢোকার সাহস করিনি। গুহার ভিতর অন্ধকার এবং কাদাময় পরিবেশ আমাদের কিছুটা নিরুৎসাহিত করে। তবুও গুহার বাইরের সৌন্দর্য, গুহার চারপাশের নীরবতা, এবং পাহাড়ি বাতাস আমাদের মনকে এক প্রকার প্রশান্তি দেয়। আলুটিলায় কাটানো সময়টি সত্যিই এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা ছিল।
ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু
সন্ধ্যার পর, আনুমানিক রাত ৭টার দিকে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। ‘চান্দের গাড়ি’ থেকে নেমে বাসে উঠে আমরা নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করি। বাসে আরামদায়ক আসন, হালকা সাউন্ড সিস্টেমে গান, আর চারপাশের পাহাড়ি প্রকৃতির ছায়া আমাদের যাত্রাকে মসৃণ করে তোলে।
খাগড়াছড়ি থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত পথ ছিল অনেকটা আরামদায়ক। রাত ১টার দিকে কুমিল্লায় পৌঁছাই। চালক বিশ্রামের জন্য বাস থামান, কারণ সেখান থেকে ঢাকার দূরত্ব আর খুব বেশি নয়। ভোরের দিকে বাস আবার যাত্রা শুরু করে।
ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে আমরা ঢাকার গুলিস্তান এসে পৌঁছাই। একে একে সবাই একে অপরকে বিদায় জানিয়ে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যাই।
এই পুরো যাত্রা ছিল এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা, যা শুধুমাত্র পাহাড়, মেঘ, আর প্রকৃতির জন্য নয়, বরং নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশ, আর প্রতিটি মুহূর্তের জন্যও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
একাকীত্বের মাঝে নতুন বন্ধুত্ব
সাজেকে যাত্রার মাঝে আমার একা একা ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল একেবারে অনন্য। এই সফরে, আমি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করিনি, বরং নতুন মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হতে এবং সম্পর্ক গড়ে তুলতে সুযোগ পেয়েছিলাম।
যাত্রার প্রথম থেকেই, আমি তিনজন নতুন মানুষের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি করি। আমাদের সম্পর্ক একে অপরের মাঝে একটি বন্ধন তৈরি করেছিল যা আমাদের যাত্রাটিকে আরও বিশেষ করে তুলেছিল। আমরা একসঙ্গে পাহাড়ে উঠেছিলাম, আলোচনার মধ্যে নিজেদের চিন্তা ভাগাভাগি করেছিলাম, এবং একে অপরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে করতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছিলাম।
এছাড়াও, আরও ১২ জন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল যাদের সঙ্গে ছোট ছোট আলাপচারিতা আমাদের বন্ধুত্বের পরিধি বাড়িয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ ছিল যারা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে এসেছিল, আর কেউ ছিল যারা ভিন্ন ভিন্ন কাজে পারদর্শী। তাদের সাথে পরিচয়ের মধ্যে আমি প্রতিটি মানুষের আলাদা দিক সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম, যা আমার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
এই যাত্রায় একা ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারটা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। একা থাকতে থাকতে নিজের মধ্যে একটা শান্তি ও আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। প্রকৃতির মাঝে একাকী সময় কাটানোর ফলে আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি। কখনো কখনো একা ঘুরে বেড়ানো নিজের ভেতরের শক্তিকে চিহ্নিত করার সুযোগ দেয় এবং সাজেকের মতো নিরিবিলি স্থানে এই সময়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
অন্যদের সাথে পরিচয় হওয়ার পাশাপাশি, একাকীত্বের মাঝে আমি সেই সব মুহূর্তের সৌন্দর্যও অনুভব করেছিলাম যা গ্রুপের মধ্যে কখনোই অনুভব করা সম্ভব নয়। সাজেকের মেঘমালা, পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য, এসব আমি একা থাকতে থাকতে আরো গভীরভাবে অনুভব করেছিলাম। একা ঘুরে বেড়ানোর মাধ্যমে আমি জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলোর দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে পেরেছিলাম।
Leave a Reply